২১ শতকের সেরা দশ হরর/ নাসিমুল হাসান

নিয়ত মন্তাজের নতুন একটা পর্ব শুরু করলাম ‘২১ শতকের সেরা দশ’ নামে। এর মাধ্যমে আমরা ধারাবাহিকভাবে নিয়ত মন্তাজের চোখে বিভিন্ন জনরার আওতায় বিশ্বসেরা দশটি সিনেমা নিয়ে আলোচনা করব। মূলত ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলোই এই পর্বের জন্য মনোনীত করা হবে। যারা নিয়ত মন্তাজের পাঠক ও সমালোচক, সবার কাছ থেকেই নিজস্ব পছন্দের সেরা দশের প্রত্যাশায় থাকব। আমাদের আজকের আয়োজন ‘হরর’ মুভির সেরা দশ নিয়ে।  তো কাউন্টডাউন শুরু হয়ে যাক…

১০। লেক মঙ্গো (অস্ট্রেলিয়া, ২০০৮)

পরিচালকঃ জোয়েল এন্ডারসন

অস্ট্রেলিয়ান এই হররটির প্রধান চরিত্র ১৫ বছর বয়সে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া এলিস পালমারের। ঘটনা শুরু হয় যখন এলিসের ছোট ভাই ম্যাথিউ তার মৃত বোনকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে দেখতে পেতে থাকে। এলিসের রেকর্ড করা কিছু পুরনো মোবাইল ভিডিওতে দেখা যায় তার নিজের ভূতই তাকে ধাওয়া করে ফিরছে। এরকম একটা গল্প নিয়েই ডকুমেন্টারী স্টাইলে জোয়েলের এই ছবিটি নির্মিত। ‘দ্যা রিং’ ছবির নির্মাতারা উঠে পড়ে লেগেছে ছবিটির হলিউড রিমেকের জন্য।

৯। স্লিপ টাইট (স্পেন, ২০১১)

পরিচালকঃ জমি বালাগুয়েরো

sleep-tight-movie-poster-2010-1020735230

স্প্যানিস এই হরর ছবিটির গল্প অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং কেয়ারটেকার সিজারকে নিয়ে। যার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্যই হল মানুষের ক্ষতি করা। ক্লারা নামের একজন মেয়ের জীবনকে নরকে পরিণত করে সিজার। ক্লারার বয়ফ্রেন্ড মার্কোস যখন গল্পে ঢুকে পড়ে, তখন থেকে ঘটতে থাকে উত্তেজনাপূর্ণ সব ঘটনা। অনেক সমালোচকের মতেই, রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেতে পারে বালাগুয়েরোর এই ছবিটি দেখার পর।

৮। মার্টারস (ফ্রান্স/কানাডা, ২০০৮)

পরিচালকঃ প্যাসকেল লগিয়ের

4

নিউ ফ্রেঞ্চ এক্সট্রিমিটির সাথে যারা পরিচিত তারা জানেন যে এই বিশেষ ধারাটি কিভাবে সামাজিক ট্যাবু, ভায়োলেন্স আর সেক্স এর মত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়। সেই একই ধারার এই হরর ছবিটির গল্পে দেখা যায় দুই বন্ধু- লুসি ও আনাকে, যারা ছোটবেলায় কিডন্যাপ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। পনের বছর পর তার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তৈরি হয় ওরা, কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে লড়াই, তাদেরকে নতুনভাবে আবিস্কার করে। হলিউডে নতুন করে রিমেকেরও চিন্তা শুরু হয়ে গেছে ছবিটি নিয়ে।

৭। জুলিয়া’স আইজ (স্পেন, ২০১০)

পরিচালকঃ গুইলেম মোরালেস

3

তালিকায় গুইলারমো দেল তরোর তিনটি ছবির মধ্যে এটির কথা আসবে আগে। তার প্রযোজনার এ ছবিটির গল্পে দেখা যাবে জুলিয়াকে, যার চোখের দৃষ্টি ধীরে ধীরে কমে আসছে। অন্ধ যমজ বোন সারা’র অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারন খুঁজতে গিয়ে অনভিপ্রেত অনেক কিছুর মুখোমুখি হতে হয় জুলিয়াকে। তার চারপাশে ঘটতে থাকে মৃত্যুসহ নানা ভৌতিক ব্যাপার। মোরালেসের এই ছবিটি রোটেন টমেটোজ সাইটের ‘৯৪% ফ্রেশ’ বলে মনোনীত।

৬। টুয়েন্টি এইট ডেজ লেটার (বৃটেন, ২০০২)

পরিচালকঃ ড্যানি বয়েল

জম্বিদের নিয়ে সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে নতুন একটি ধারার প্রবর্তক বয়েলের এই ছবিটি। গল্পে দেখা যায়, সমস্ত বৃটেনে একটা ভয়াবহ প্রানঘাতি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ২৮ দিন পর শুধু মাত্র হাতে গোনা কিছু মানুষকে বেঁচে থাকতে দেখা যায়। তারা টের পেতে শুরু করে যে শুধুমাত্র ভাইরাস তাদের জন্য একমাত্র থ্রেট নয়। ‘টুয়েন্টি উইকস লেটার’ নামে ছবিটির একটি সিক্যুয়েলও বের হয়েছে ২০০৭ এ। এম্পায়ার ম্যাগাজিনের ‘ফাইভ হান্ড্রেড গ্রেটেস্ট মুভিজ অফ অলটাইম’ এর ২০০৮ এর তালিকাতেও স্থান করে নিয়েছে ছবিটি।

৫। দ্যা অরফেনেজ (স্পেন/মেক্সিকো, ২০০৭)

পরিচালকঃ জে.এ. বায়োনা

2

বায়োনার প্রথম এই ছবির অন্যতম প্রযোজক মেক্সিকান সিনেমার কিংবদন্তী গুইলারমো দেল তরো। মূলত বন্ধু বায়োনার অনুরোধেই ছবিটি প্রযোজনা করতে রাজী হন দেল তরো। গল্পটি লরা, তার স্বামী কার্লোস ও দত্তক নেয়া সন্তান সিমনকে নিয়ে। লরা তার ছোটবেলার এতিমখানাটি কিনে নেয় নতুন করে সংস্কার করার জন্য। কিন্তু ঝামেলা শুরু হয় সেখানেই যখন সিমন মুখোশপড়া থমাসের সাথে বন্ধুত্ত্ব পাতায় এবং একদিন বাড়ী থেকে হারিয়ে যায়। ক্রিটিকাল ও কমার্শিয়াল, দুই ধরনেরই সাফল্য অর্জন করা এই ছবিটির একটি রিমেকও তৈরি হয়েছে হলিউডে।

৪। দ্যা ডিসেন্ট (বৃটেন, ২০০৫)

পরিচালকঃ নেইল মার্শাল

অধুনা সময়ে হরর ফিল্মের যতগুলো ওয়াচ লিস্ট হয়েছে সবগুলোতেই উপরের কাতারে ‘দ্যা ডিসেন্ট’। একটা ট্র্যাজিক অ্যাক্সিডেন্টের পর ছয় বন্ধু মিলিত হয় একটা প্রাচীন গুহা আবিস্কারের অ্যাডভেঞ্চারে। ঝামেলা বাঁধে যখন পাথর ধস হয়ে গুহাটা বন্ধ হয়ে যায় আর তারা বুঝতে পারে তাদের বাইরেও অন্য কেউ আছে সেই গুহার ভেতরে। মানুষখেকো কিছু হিউমনয়েডের সাথে পরিচিত হয় ওরা। নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, গত কয়েক বছরের মধ্যে সেরা হরর ছবি এটি।

৩। লেট দ্যা রাইট ওয়ান ইন (সুইডেন, ২০০৮)

পরিচালকঃ থমাস আলফ্রেডসন

1

সুইডিশ এই ক্লাসিক রোমান্টিক হরর ছবিটি ইউরোপের সীমানা ছাড়িয়ে সমস্ত বিশ্বেই আলোচিত ও নন্দিত হয়েছে। ‘লেট মি ইন’ নামে হলিউডে একটি রিমেকও হয়েছে। সুইডিশ ঔপন্যাসিক জন আভিদ লিন্ডভিস্ট এর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিটির প্রেক্ষাপট ১৯৮০ সালের, মূলত গল্পটি ১২ বছরের অস্কার ও তার সমবয়স্ক একজন ভ্যাম্পায়ার এলির সাথে বন্ধুত্ত্বকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। ভ্যাম্পায়ার হওয়ার কারনে এলিকে দিনের আলো থেকে দূরে থাকা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই করতে হয়। অস্কার তাকে নানাভাবে সাহায্য করতে চায় আর এভাবেই ঘটনা এগিয়ে যেতে থাকে। প্রয়াত সমালোচক রজার এবার্ট ছবিটিকে ‘নসফেরাতু’ ও ‘নসফেরাতু দ্যা ভ্যাম্পায়ার’ এর মত ক্লাসিকের সাথে তুলনা করেছেন।

২। দ্যা ডেভিল’স ব্যাকবোন (স্পেন/মেক্সিকো, ২০০১)

পরিচালকঃ গুইলারমো দেল তরো

স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই ছবিটির পরিচালক-প্রযোজক দেল তরো হলেও অন্যতম প্রযোজকের তালিকায় আছেন পেদ্রো আলমোদোভার। ১৯৩৯ সালের গল্পটা দশ বছর বয়সী কার্লোসের। ঘটনাচক্রে তার আশ্রয় হয় এক এতিমখানায়; যেখানে সে দেখা পায় কারম্যান ও ক্যাসেরাসের মত বন্ধুসুলভ চরিত্রদের সাথে, অন্যদিকে আছে জাসিন্টো নামের এক রাগচটা মারমুখো কেয়ারটেকার ও একটা অশরীরী আত্মা যে সবাইকে ভয় দেখিয়ে বেড়ায়। সবকিছু ছাপিয়ে দেল তরোর এই ছবিটিকে অনেক বেশী মানবিক একটা ভাবনা বলে মনে হয়।

এবং

১। দ্যা আদার্স (যুক্তরাষ্ট্র/ফ্রান্স/স্পেন/ইটালী, ২০০১)

পরিচালকঃ আলেজান্দ্রো আমেনেবার

সর্বকালের সবচেয়ে ব্যাবসা সফল হরর ছবির তালিকায় এটি শীর্ষ কাতারে। নিকোল কিডম্যান অভিনীত দুর্দান্ত এই ছবিটির প্রধাণ চরিত্র- এক ক্যথলিক মায়ের, যে তার ছেলে-মেয়ে সহ এক দুর্গম বৃটিশ কান্ট্রি হাউজে বাস করছে, যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মাত্র শেষ। সন্তানদের দুজনেরই বিশেষ এক অসুখ আছে যার কারনে তারা সূর্যের আলোর সামনে যেতে পারেনা। কিছুটা আগন্তুকের মতন নতুন তিনজন কাজের লোক বাড়ীতে আসার পর থেকে ঘটতে থাকে সব ভয়ংকর ঘটনা। নিয়ত মন্তাজের চোখে একুশ শতকের এখন পর্যন্ত সেরা হরর ছবি ‘দ্যা আদার্স’।

2 thoughts on “২১ শতকের সেরা দশ হরর/ নাসিমুল হাসান

  1. I think ‘the others’ movie is awesum.a mother who try to save her children frm real peapal.it made us thinking ‘mother is always mother’ nd they always try to protect her children in any cost…….

  2. Lake Mungo আর Sleep Tight দেখা হয় নাই, বাকিগুলা আসলেই বেশ ভাল মানের আঙ্কমন হরর মুভি । এর বাইরেও আসলে বেশ ভাল মানের কিছু হরর মুভি এসেছে এই শতকে , আশা করি লিস্ট আপডেটেড হবে সাম্নে্‌, এই ২ টা ডাউনলোড দিলাম।।

Leave a comment